মঙ্গলবার, অক্টোবর ২২, ২০২৪

ধনবাড়ীতে বাড়ীর অঙিনায় বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

হাফিজুর রহমান:
প্রকাশের সময় : July 03, 2024 | বাংলাদেশ

ধনবাড়ীতে বাড়ীর অঙিনায় বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী অঞ্চলে পরিত্যক্ত জায়গায় বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকরা আদা চাষে ঝুঁকছেন। বড়ীর আঙিনা, বাড়ীর ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরে বাণিজ্যিকভাবে মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। 

স্বল্প জায়গায়, অল্প সময়ে, কম খরচে চার গুণ লাভ পাওয়ায় আদা চাষে ঝঁুকছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। উদ্যানতত্ত্ববিদ ও কৃষি কর্মকর্তারাও নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন লাভজনক এই পদ্ধতি আদা চাষে।  

সরেজমিনে স্থানীয় চাষীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, সীমিত খরচ, কম জায়গা আর অল্প শ্রমে বস্তায় মাটি—সার ভরে আদা চাষ করা যায়। আদা গাছে পানির চাহিদা কম। রোগ—বালাই নেই বললেই চলে। সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় সীমীত। বস্তা সহজে বহণের ফলে বন্যায় ক্ষতি হয় না। আদা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা না থাকায় আদা চাষ করে অতিরিক্ত অর্থ পাচ্ছেন কৃষকরা।

ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস ও উদ্যানতত্ত্ববিদ কার্যালয় (হর্টিকালচার সেন্টার) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৩’শত জন কৃষক প্রণোদনার আওতায় ও ব্যাক্তিগত উদ্যাগে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় মাটি—সার ভরে আদা চাষ শুরু করছেন। প্রণোদনায় আওতায় বস্তা, আদা বীজ, সার ও কীটনাশক দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। চৈত্র—বৈশাখ মাসে আদা বীজ বপন করলে পৌষ—মাঘে উত্তোলন করা যায়। একটি বস্তায় ৭০—৮০ গ্রাম আদার বীজ বপন করা হয়। জাত ভেদে বস্তা প্রতি ১—৩ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

বাড়ির আঙিনায় বস্তাতে আদার গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত ধনবাড়ী বাজার এলাকার কৃষক মো. ইয়াহুদ আলী তালুকদার। তিনি  বলেন, ‘৫০২ বস্তায় আদাসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১০ শতক জমিতে আদা চাষ করেছি। গত বছর ফলন ভালো পেয়েছি। আশা করি এবারও ফলন ভালো হবে। প্রতি কেজি আদার বাজার মূল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে ছায়াযুক্ত জায়গায় ফলন ভালো হয়।’

কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ীর আঙিনায় ও পুকুর পাড়ের পরিত্যক্ত জায়গায় আদা চাষ শুরু করছেন মুশুদ্দি এলাকার কৃষক আল—আমিন। তিনি বলেন, ‘আদা চাষে প্রণোদনায় আওতায় ৪’শত বস্তা, বীজ—সার ও কীটনাশক পেয়েছি। এই পদ্ধতিটা একেবারেই নিরাপদ। বুঝেশুনে বস্তায় আদা চাষ করলে ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই কৃষক।’

উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মসলার উন্নত জাত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী প্রকল্প—এর উদ্যোগ নিয়েছে। অন্য কৃষকদের মধ্যে এটি সম্প্রসারিত হলে এলাকায় মসলা উৎপাদন আরও সমৃদ্ধ হবে।’

‘ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার কার্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. রাসেল পারভেজ তমাল জানান, বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। ধনবাড়ী, মধুপুর, গোপালপুর, ভুয়াপুর ও ঘাটাইল উপজেলাগুলো নিয়ে হর্টিকালচার সেন্টার কাজ করে আসছে। এই পাঁচ উপজেলার কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বস্তায় হলুদ চাষেও উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল আদার বীজ সংগ্রহে আমরা ২ হাজার বস্তায় আদার বীজ বপন করেছি। যাতে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।’

ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান “এইচ আর নিউজ টুয়েন্টিফোর” কে বলেন, ‘পরিত্যক্ত জায়গা ও বাড়ীর পাশে মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বস্তায় আদা চাষে অল্প খরচে লাভবান হবে কৃষক। কৃষকদের আদা চাষে সকল প্রকার সহযোগীতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 



এই ক্যাটাগরির অনন্যা খবর