কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ১৬ ও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ৮ এইচএসসি (বিএম শাখা) পরীক্ষার্থী অংশ নিতে পারেনি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। গত রবিবার পৃথক এই দুই স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গত রবিবার কালীগঞ্জের চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোওয়া সূর্যমুখী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ১৬ পরীক্ষার্থী অংশ নিতে পারেনি।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে প্রতি বছর ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক সফলতা অর্জন করে আসছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানটির এইচএসসি প্রথম বর্ষের ১৬ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন।
তারা যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায় পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে। এমন আশ্বাসে তারা পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো সহায়তা বা প্রবেশপত্র পায়নি। ফলে ফরম পূরণ এবং প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
পরীক্ষার্থী বিপুল চন্দ্র ও আবু হাসান লিমন জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল কেন্দ্রেই প্রবেশপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই আশায় কেন্দ্রে গিয়েও পরীক্ষা দিতে পারেননি তারা ১৬ পরীক্ষার্থী। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেলো শিক্ষাজীবনের একটি বছর। এটির ন্যায় বিচার দাবি করেন তারা।
পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বাবুল বলেন, সন্তানদের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেন এমন শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
শিয়ালখোওয়া সূর্যমুখী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সুকুমার বলেন, ১৬ পরীক্ষার্থীর সবার ফরম পূরণ করা হয়েছিল। অনলাইন জটিলতায় তাদের প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে ঢাকায় কয়েক দফায় গিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, লোকমুখে বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, ধনবাড়ী উপজেলার ভাইঘাট আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখার ৮ শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থী মানতে রাজি নয়।
এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা উপজেলা প্রশাসন, কলেজ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অভিযোগ করে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। তারা জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের দাবি জানান।
মধুপুরের বিভিন্ন এলাকার অভিযোগকারী শিক্ষার্থী নাঈম, স্বাধীন, রনি, হামিদ, মুকুল জানান, তারা প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা কলেজ করণিক ছানোয়ারের কাছে জমা দেয়। পরে তারা কলেজে প্রবেশপত্র নিতে গেলে জানতে পারে তা আসেনি। শনিবার পরীক্ষার আগের দিন আসবে ছানোয়ারের এমন প্রতিশ্রুতিতে তারা সারাদিন অপেক্ষা করে প্রবেশপত্র হাতে না পাওয়ায় পরীক্ষায়ও বসতে পারেনি। সহপাঠীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও প্রবেশপত্র না থাকায় রবিবারও পরীক্ষা দিতে না পেরে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। কেন তাদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করা হলো। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।
এদিকে করণিক ছানোয়ারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রধান করণিক আবদুস সালাম জানান, গত রবিবার ছানোয়ার কলেজে আসেননি। ধোপাখালী টেকনিক্যাল কলেজ কেন্দ্রে তাদের ১০৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। যারা কলেজে পরীক্ষার বিষয়ে এসেছিল তারা ছাত্র না।
আবু সাঈদ নামের ওই কলেজের এক শিক্ষক জানান, প্রশাসন থেকে ছানোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তাকে বহিষ্কার করতে সভা করে কলেজ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেবে শিগগিরই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগকারীরা কলেজের ছাত্র না বলে শুনেছি। তবু কলেজ অধ্যক্ষকে ওই অভিযুক্ত করণিকসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম জানান, অভিযোগকারীরা কলেজের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত বৈধ শিক্ষার্থী না হওয়ায় তাদের প্রবেশপত্র পাওয়া বা পরীক্ষা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।