সুপারি পাতার পণ্যগুলো ওয়ানটাইম প্লাস্টিক থেকে বেশি টেকসই, শক্তপোক্ত এবং মাইক্রোওয়েভপ্রুফ মডেল :তাসফিয়া নাজমুল, উদিতা বিশ্বাস ও নুসরাত জাহান

শখ করে কলা পাতায় খাবার হয়তো অনেকেই খেয়েছেন; কিন্তু যদি বলা হয় সুপারি পাতায় খাবার খাওয়ার কথা। তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন! অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ দেশের বাজারে সুপারি পাতার খোলের বাসনপত্রের চল শুরু হয়েছে। আধুনিক জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠছে সুপারি পাতার খোলের তৈরি নান্দনিক ডিজাইনের বিভিন্ন তৈজসপত্র; যা ব্যবহারকারীদের জীবনে যোগ করছে ভিন্নমাত্রা।
সরাসরি গাছ থেকে সুপারি পাতা সংগ্রহ; এরপর করা হয় জীবাণুমুক্ত। এবার মেশিনে গুঁড়া করে তাপের মাধ্যমে বিভিন্ন আকারের তৈজসপত্রে রূপ দিচ্ছে এনরুট ও এনগ্রিন নামের দুই প্রতিষ্ঠান। গতিময় জীবনে সময় এবং খরচ বাঁচাতে যেমন এতদিন প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের ব্যাপক চল ছিল, তার সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন অনেকেই ভিন্ন কিছু চেষ্টা করছে।
দেশে উৎপাদিত ব্যাপক পরিমাণ সুপারি পাতা থেকে এনরুট গ্রিনারিজ তৈরি করছে নানা ধরনের তৈজসপত্র। গোল, চৌকা ও হার্ট শেপ প্লেট, বাটি, ফুড বক্স, কাপ, চামচ ইত্যাদি পণ্য এখন মিলছে বাজারে। ৩, ৫, ৬, ৯ ও ১০ ইঞ্চিসহ বিভিন্ন মাপের এ পণ্যগুলো অনেক শোরুমে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে।
ফারজানা নামের এক গৃহবধূ বলেন, 'ভিন্ন ধরনের উপকরণে তৈরি এই পণ্য আমাদের জীবনের অনুভূতি বদলে দিতে পারে। ঘরের সাজেও ভিন্নতা আনতে পারে এসব থালা, বাটি, প্লেট। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার পরিবেশনে নিঃসন্দেহে এটি অতিথিদের চমকে দেবে।' একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জুবায়ের হোসেন। তিনি জানান, 'অফিস মিটিংয়ে সুপারি পাতার খোলে তৈরি প্লেটে খাবার পরিবেশন ক্লায়েন্টদের কাছে আধুনিক রুচির পরিচয় বহন করে।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিটিংয়ে কার্যকর ফলাফল পেয়েছি। বহুল প্রচলিত ম্যালামাইন, সিরামিক কিংবা কাচ থেকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সৌন্দর্যে এগুলো এগিয়ে।'
তবে ওয়ানটাইম পণ্য বলা হলেও, আদতে এটি ব্যবহার করা যায় একাধিকবার। এমন মন্তব্য করেন এসব পণ্যের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. তারিকুল হক। তিনি বলেন, 'যদিও আমরা এসব পণ্যকে ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে বলছি কিন্তু আমাদের প্লেটগুলো মাইক্রোওভেপ্রুফ, ওয়াটারপ্রুফ এবং চাইলে এ প্লেটগুলোকে ৫-৬ বার পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।'
পরিবেশবান্ধব এ পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা চলছে বলে জানা গেছে। মো. তারিকুল হক বলেন, 'প্লেট, বাটি, ফুড বক্স এবং চামচের সঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও সব ধরনের ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সুপারি পাতার তৈজসগুলোকে মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তোলাটা এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।'
সুপারি পাতার খোলের তৈরি এসব ওয়ানটাইম পণ্যগুলো একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে অনেকের কর্মসংস্থান। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যোক্তারা এনরুট ও এনগ্রিনের মাধ্যমে মেশিন সংগ্রহ করে নিজেরাই তৈরি করছেন এসব পণ্য। আবার অনেকে তৈরি পণ্য সরবরাহ করেন এই প্রতিষ্ঠানে। রাজধানীর বিভিন্ন শোরুমে সরবরাহ করা হয় এগুলো। ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের বিকল্প হলেও সুপারি পাতার পণ্যগুলো দিচ্ছে এর চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা। এটি সাধারণ ওয়ানটাইম প্লাস্টিক থেকে বেশি টেকসই, শক্তপোক্ত এবং মাইক্রোওয়েভপ্রুফ। এতে করে যেমন দৈনন্দিন জীবনে এর চল বাড়ছে, পাশাপাশি এর অন্যতম সুবিধা হলো- যে কেউ পারবে নানা রকম কাস্টমাইজেশন করতে।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং এমন শিল্পে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা চাই। প্নাস্টিক আর পলিথিনের অনেক বিকল্প অনাদিকাল থেকে এই দেশেই আছে। আমরা মৃৎশিল্প, তামাশিল্প শেষ করে দিয়েছি। এর বিপরীতে প্নাস্টিককে শিল্প হিসেবে মেনে নিলাম, যা অবিবেচনাপ্রসূত। প্নাস্টিক, পলিথিনে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে।'
খাবারের নানা রকম শৈলী, ডেলিভারি এবং অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের বিপরীত পরিবেশবান্ধব এই প্লেট এবং বক্সগুলো ব্যবহার করে আপনিও পরিবেশ রক্ষায় রাখতে পারেন ভূমিকা। প্লেট ও মেশিন এখন পাওয়া যাচ্ছে এনরুট গ্রিনারিজের ওয়েবসাইটে। খুচরার পাশাপাশি থাকছে পাইকারি পণ্য কেনার সুবিধা।